চিঠি- ঈশ্বরের চিঠি

ঈশ্বরের চিঠি
– তমালী বন্দ্যোপাধ্যায়

স্নেহের মানুষ,

তোরাই তো সেই মানুষ…? অধম, অর্বাচীন, হিংস্র, নিন্দুক, স্বার্থপর, পিশাচ? তোরাই তো সবসময় মুখে ধম্ম ধম্ম করে চেঁচাস…অথচ হেলায় নিজের মানব ধর্ম বিসর্জন দিয়েছিস…একবার চারদিকে তাকিয়ে দ্যাখ আমার সৃষ্ট সকল উদ্ভিদকুল, প্রাণীকুল তাদের নিজ নিজ ধর্ম বজায় রেখে বেঁচে আছে। তোদের আমি সবচেয়ে বুদ্ধিমান করে বানালাম আর তোরাই কি’না পৃথিবীর সবচেয়ে নির্বোধ প্রাণী হলি!!

মুখে তোদের ঈশ্বরের জয়গান–অথচ হিংসা দিয়ে, ঈর্ষা দিয়ে, লোভ দিয়ে, ঘৃণা দিয়ে আমাকে প্রতিমুহূর্তে ব্যথিত করিস। তোদের অস্ত্রের প্রতিটি খোঁচায় আমি রক্তাক্ত হই…চোখ বন্ধ করি ভয়ে, অন্ধ হতে চাই।

তোরাই তো সেই মানুষ যারা ধর্মের দোহাই দিয়ে আমাকে ছুঁতে চাস মন্দিরে, মসজিদে, গীর্জায়? কিন্তু তোরা কি জানিস না…আমি সেখানে থাকিই না… আমি জলে, আকাশে, বাতাসে,গাছে লতায়, সমগ্র প্রাণীকুলে মিশে আছি…আছি তোদের প্রাণের ভিতর।

তোদের মন্ত্রোচ্চারণ, আজান,প্রার্থনা আমার কানে পৌঁছায় না কারণ তোদের স্বার্থপর, অহংকার, নিন্দা, বিবাদ বাক্য শুনে শুনে আমি ক্লান্ত…আমি বধির হতে চাই।

তোদের ব্যবহার, তোদের মুখোশ পরা মুখ দেখে আমি নির্বাক। তোদের প্রতিটি দুষ্কর্ম আমায় লজ্জা দেয়, ব্যথিত করে আমায়.. আমি খুশী হইনা মোটেও।

আর শোন, তোরা ধর্মের নামে হানাহানি বন্ধ কর।আর ওই যে তোরা ধর্মগ্রন্থ মানিস…ওটাও আমি বানাইনি…বানিয়েছিস তোরা…নিজেদের প্রয়োজনে। সেই অতীত যুগের নিয়মকানুন তোরা আধুনিক,উত্তর আধুনিক যুগেও চালাতে চাস নিজের প্রয়োজনে…আমার কোন প্রয়োজন নেই এসবে।আমি শুধু বলি তোরা সময়ের সাথে সাথে এগিয়ে চল…আধুনিক হ’ ..পুরোন ধ্যানধারণা আঁকড়ে বাঁচিসনি…মনে জ্ঞানের আলো জ্বাল আর পিছনে না ছুটে সামনে এগো…নতুন কিছু করে দেখা।

আমি প্রতিদিন দেখি ধর্ম মানতে গিয়ে তোরা অধর্ম করিস আর ধার্মিক হতে গিয়ে অধার্মিক হোস। প্রতিদিনের জীবন সুন্দর ভাবে অতিবাহিত করাই আসল ধর্ম পালন।আমি চাই আমার নাম নিয়ে তোরা শুদ্ধ হ’,সৎ হ’,জ্ঞানী হ’, ভালোমানুষ হ’, মানবিক হ’…সব অজ্ঞানতা থেকে বেরিয়ে এসে জ্ঞানের আলো জ্বাল নিজেদের মনে…খুশী থাক, ভালো থাক আর অন্যকেও ভালো রাখ রে মানুষ।

আর শোন স্বর্গ, নরক বলে কিছু নেই। একমাত্র এই গ্রহ পৃথিবী যেখানে তোরা আছিস, সেটাই আছে…তোরাই ভালোবেসে সেটাকে স্বর্গ বানাস আবার দলাদলি, মারামারি, হানাহানি করে সেটাকেই নরক বানাস।

তবে এটা সত্যি যে পাপ-পুণ্য আছে আর আছে কর্মফল। একটু খেয়াল করে দেখিস তোরা অন্যায় করলে,আঘাত দিলে সেটা তোদের জীবনে ঠিক ফিরে আসে অভিশাপ হয়ে… আজ নয়তো কাল…এটাই কর্মফল…বুঝলি অজ্ঞান মানুষ?

আর ধর্ম ধর্ম করে বিপুল অর্থব্যয় বন্ধ কর।আমার কিছুর অভাব নেই…তাই ঘুষ দিয়ে পুজো উপচারে আমাকে খুশী করতে আসিসনা…তাতে আমি রুষ্টই হবো।আর প্রচুর অর্থ খরচ করে উৎসব অনুষ্ঠান আর ধর্মস্থান…মন্দির,মসজিদ,গীর্জা না বানিয়ে সেই টাকা গরীবদের দান কর…আমি তাতে খুশীই হবো।

ভালো করে মনে রাখিস আমার সব কথা।
তোরা শুদ্ধ হ’…তাহলে তোদের বিশ্বাস আমি দু’হাত পেতে নেবো…তোদের সমর্পণে আমি খুশী হবো। নয়তো চিরকাল আমি অন্ধ-বোবা-কালা পাষাণ হয়েই থাকবো।

আমি চাই সমগ্র উদ্ভিদকুল আর প্রাণীকুলকে তোরা রক্ষা করবি..প্রকৃতিকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাবি..নিজেদের বিপদ নিজেরা ডেকে আনবি না। মানুষ হয়ে মানুষের পাশে ভালো থাকিস।
ইতি
তোদের এক এবং একমাত্র ঈশ্বর

Loading

Leave A Comment